দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো কাতার বিশ্বকাপ।কাতার বিশ্বকাপের ২২তম আসর শেষ হতেই ২৩তম আসরের আয়োজন পর্ব ফিফার। কানাডা, মেক্সিকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসতে যাচ্ছে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ। ওই আসরে প্রথমবারের মতো অংশ নিবে ৪৮টি দল।
১৯৯৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিশ্বকাপের সাতটি আসরে ৩২টি করে দল অংশ গ্রহণ করে। এর আগে ১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত চার আসরে অংশ নেয় ২৪টি করে দল। ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের প্রথম আসরে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ছিল ১৩।
১৯৫০ বিশ্বকাপ আসেরও সমান সংখ্যক দল অংশ নেয়। তবে বিশ্বকাপের তৃতীয় আসর তথা ১৯৩৮ সালে ১৫টি দল অংশ নেয়। এছাড়া বাকি আট আসরে ছিল ১৬টি দল করে। ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ৪৮ দলের মাঝে প্রতি গ্রুপে তিনটি করে দল ধরে সর্বমোট ১৬টি গ্রুপে ভাগ হবে।
প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা খেলবে শেষ ষোলোতে ১৬তে। নক আউট পর্ব হবে আগের আসর গুলোর মতোই। সুপার ষোলো থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল এরপর সেমিফাইনাল হয়ে ফাইনালের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ান নির্বাচন করা হবে।
তাপমাত্র এড়াতে নভেম্বর-ডিসেম্বের অনুষ্ঠিত হয় কাতার বিশ্বকাপ। তবে ২০২৬ বিশ্বকাপ ঐতিহ্যবাহী গ্রীষ্মের উইন্ডোতে ফিরে আসবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর ১৬টি শহরে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচগুলো। এর মধ্যে বেশিরভাগ ম্যাচই হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
দেশটির নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত ১১টি শহরের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালসহ ৮০ ম্যাচের মধ্যে ৬০টিই অনুষ্ঠিত হবে। কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন বা চমক বলা হচ্ছে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয়।
২০২৬ বিশ্বকাপে আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে আরও চমক থাকবে বলে জানিয়েছেন ফিফার টেকনিক্যাল গ্রুপের প্রধান ক্লিনসম্যান।কাতারে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা ২০২৬ টুর্নামেন্টে আফ্রিকা এবং এশিয়া থেকে আরও চমক দেখতে যাচ্ছি।
ফিফা জানিয়েছে, কাতার বিশ্বকাপের স্বত্বা ও স্পনসরশিপ থেকে ৭.৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার আয় হয়েছে সংস্থাটির। যা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ১ বিলিয়ন বেশি। ধারণা করছে পরবর্তী আসরে এরচেয়েও বেশি হবে।
ফিফা থেকে আরও জানায়, ২০২৬ বিশ্বকাপের স্বত্বা ও স্পনসরশিপের জন্য ইতোমধ্যে একটি কোম্পানি নিশ্চিতভাবেই অপেক্ষা করছে। তারা হলো বিয়ার বুডওয়েজার।কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ২-০ গোলের লিড নিয়েছে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ২৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন লিওনেল মেসি। ওই পেনাল্টি নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, যা আদায় করে দিয়েছেন ডি মারিয়া।তবে তার করা দ্বিতীয় গোলটি দারুণ। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে লিড ২-০ করেন জুভেন্টাসে খেলা ডি মারিয়া। দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাক তোলে আর্জেন্টিনা।
মেসির পাস ধরে এগিয়ে নেন ম্যাক আলিস্টার। বক্সের মুখে গিয়ে তা বাড়ান নাম্বার ইলেভেনকে।লেস ব্লুজ গোলরক্ষক হুগো লরিসকে ফাঁকায় পেলে গোল করেন তিনি। উদযাপনকে দৌড়ে যান। সতীর্থদের সঙ্গে গোল উদযাপনের সময় কেঁদে ফেলেন শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামা অভিজ্ঞ এই ফুটবলার।
ডি মারিয়া যেন আর্জেন্টিনার সৌভাগ্যের প্রতীক। ফাইনালের নায়ক।এর আগে কোপা আমেরিকায় ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করেন তিনি। ইতালির বিপক্ষে চলতি বছর ৩-০ গোলে ফিনালিজিমা জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা। ওই ম্যাচে প্রথমার্ধে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন ডি মারিয়া।
এবার কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালেও গোল পেলেন তিনি।কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে চারটি রেকর্ড গড়েছেন লিওনেল মেসি।
আজ রোববার রাতে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে মাঠে নেমেই প্রথম রেকর্ড গড়েন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। আর ম্যাচের ২৩তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গড়েন দু’টি কীর্তি। পরের মিনিটেই চতুর্থ অর্জনে নাম লেখান এই তারকা ফুটবলার।
সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের ২৫তম ম্যাচ খেলে জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথিউজকে ছুঁয়ে ফেলেছেন মেসি। আর আজ শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নেমে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন ৩৫ বছর বয়সী এই তারকা।
ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচটি মেসির ২৬তম বিশ্বকাপ ম্যাচ।ম্যাচের পাশাপাশি সময়ের হিসাবেও শীর্ষে উঠে এসেছেন মেসি। ইতালিয়ান কিংবদন্তি পাওলো মালদিনি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২২১৭ মিনিট খেলেছিলেন। ফ্রান্সের বিপক্ষে ২৪ মিনিট খেলার পরেই মালদিনিকে টপকে যান আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
ফাইনালে মাঠে নামার আগে ২১৯৪ মিনিট খেলেছিলেন পিএসজির এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে এই নিয়ে ১২টি গোল করলেন মেসি। ফ্রান্সের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করেই পেলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন মেসি।বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির গোল মোট ১২টি।
পেনাল্টি থেকে গোল করার পর মেসিরও গোল সংখ্যা দাঁড়ালো মোট ১২টিতে। এদিকে ১২টি গোলের সঙ্গে মেসির নামের পাশে রয়েছে ৮টি অ্যাসিস্ট। অর্থাৎ ২০টি গোলে মেসির সরাসরি অবদান।যা ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও ও জার্মান তারকা মিরোস্লাভ ক্লোসার চেয়ে বেশি।
এই দুই তারকা ১৯টি করে গোলে অবদান রেখেছিলেন। ফাইনালে গোল করে তাদের ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে এসেছেন মেসি।
এখানেই শেষ নয়। এ গোলের মাধ্যমে রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্রুপপর্ব, শেষ ষোল, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল এবং ফাইনালে গোল করার নজির গড়েছেন।